ব্রেকিং

x

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেলিমের পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ! দেড় মাস ধরে হিমাগারে লাশ

সোমবার, ২১ মে ২০১৮ | ৯:৩১ পূর্বাহ্ণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেলিমের পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ! দেড় মাস ধরে হিমাগারে লাশ

পরিবার নিয়ে একটু ভালো থাকার জন্য নিজ দেশ ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছিলেন সেলিম মিয়া (৪০)। ব্যাংক ঋণ আর পৈত্রিক ফসলি জমি বন্ধক রেখে ৭ লাখ টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে গেল বছর ২২ অক্টোবর সৌদি আরবের রিয়াদে যান তিনি।


সেলিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাছাইট গ্রামের বাসিন্দা। দাম্পত্য জীবনে তিনি চার সন্তানের জনক। বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক কোরআনে হাফেজ, বড় মেয়ে নাজনীন ইসলাম মিম এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে, ছোট মেয়ে নাহিদা ইসলাম নুন অষ্টম শ্রেণি ও ছোট ছেলে আশরাফাত ইসলাম নুহাদ তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী।


পরিবারের সবাইকে ভালো রাখতে প্রবাস জীবন বেছে নিলেও ভালো নেই সেলিমের স্ত্রী-সন্তানরা। গত ১৩ এপ্রিল রিয়াদের দাখিলৌদে আগুনে পুড়ে সেলিমের মৃত্যুর সঙ্গে পুড়ে আঙ্গার হয়ে গেছে ভালো থাকার স্বপ্নও। তাই স্ত্রী-সন্তানরা এখন কেবল অপেক্ষা করছেন সেলিমের মরদেহের। মৃত্যুর দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত দেশে আসেনি তার মরদেহ। বর্তমানে রিয়াদের দাখিলৌদ এলাকার একটি হাসপাতালের হিমাগারে পড়ে রয়েছে মরদেহটি।

সেলিমের স্ত্রী লামিয়া খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। অশ্রুসিক্ত লামিয়া জানান স্বামী হারিয়ে তার দুঃখ-দুর্দশার কথা। চার সন্তান নিয়ে লামিয়ার ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।

লামিয়া জানান, প্রায় ১৮ বছর আগে সেলিমের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। সৌদি আরব যাওয়ার আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সারকারখানায় ছোট পদে চাকরি করতেন সেলিম। সব মিলিয়ে ভালোই কাটছিল তাদের জীবন। তবে সন্তান হওয়ার পর তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেন চাকরি ছেড়ে প্রবাসে যাওয়ার। প্রথমে মালয়েশিয়ায় যান সেলিম। কিন্তু সেখানে খুব একটা সুবিধা করতে না পারায় দেশে ফেরত আসেন।

লামিয়া আরও জানান, তার ননদ জোৎস্না বেগমের স্বামী রফিকুল ইসলামের মাধ্যমে মোবারক নামে এক দালালের সঙ্গে পরিচয় হয় সেলিমের। ওই দালালের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকায় সৌদি আরবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সেলিম। তবে এত টাকার যোগান দিতে ব্যাংক থেকে ঋণ, জায়গা-জমি বন্ধক এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করতে হয়েছে তাকে। সৌদি আরবের রিয়াদে গিয়ে ছয় মাস স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ নেন সেলিম। তবে তার কোনো বেতন ধরা হয়নি। শুধুমাত্র থাকা-খাওয়ার জন্য সামান্য কিছু টাকা দেয়া হতো।

দালাল মোবারক কোনো বৈধ কাগজপত্র না দেয়ায় ছয় মাস পর পুলিশ সেলিমকে আটক করে। একদিন কারাবন্দি থাকার পর সেলিমকে ছাড়িয়ে আনা হয়। এরপর থেকে কাজ না করতে পারায় রুমেই কেটেছে সেলিমের সময়। গত ১৩ এপ্রিল সকালে রুমে ঘুমন্ত অবস্থায় গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পুড়ে মারা যান সেলিমসহ আরও কয়েক বাংলাদেশি।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে লামিয়া জানান, সন্তানগুলোর ভবিষ্যৎ এখন কী? আমি কী করবো কোথায় যাবো এদের নিয়ে কিছুই বুঝতে পারছি না। ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছিলাম সেই ঋণের বোঝা টানছি আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে। এক লাখ টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা শোধ করেছিলাম। বাকি ৫০ হাজার টাকার জন্য ব্যাংকের লোকজন প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে। আমরা অনুরোধ করেছিলাম বাকি টাকাটা মওকুফ করার জন্য কিন্তু তারা মানছে না। এখন কিভাবে বাকি টাকা শোধ করব সে চিন্তায় ঘুমাতে পারি না। বন্ধক দেয়া জমিগুলোও ছাড়াতে পারছি না। কোনোরকম বাবার বাড়ি থেকে টাকা-পয়সা এনে সন্তানগুলোর মুখে খাবার তুলে দিচ্ছি। এর মধ্যে স্বামীর মরদেহটাও দেখতে পারছি না। মরদেহ পেতে দালালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, সেও টালবাহানা করছে। সরকারের কাছে আকুতি জানাই আমার স্বামীর মরদেটি যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে।
সুত্র: জাগোনিউজ

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!