ব্রেকিং

x

বেটে শরীরের লজ্জা নেই, জীবিকাই এখন কবিরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ

সোমবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ | ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ

বেটে শরীরের লজ্জা নেই, জীবিকাই এখন কবিরের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ

কবির হোসেন (২১)। লম্বায় ৩ ফুট হবে। শিশু বা কিশোর বয়সে অন্য দশজনের মত ছিল না তার জীবন। কিছুদিন মাদ্রাসায় আরবী পড়েছে, আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভর্তি হয়েছিল। স্কুল কিংবা মাদ্রাসায় গেলেও চুপচাপ বসে থাকত। তাও একদম শেষের দিকে। স্যার বা হুজুরদের কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। কিছুটা সংশয়, কিছুটা ভয়। এভাবেই তার জীবনের কিছুদিন কেটে যায়। আসলে একদম বেটে বা খাটো ছিল বলে মানসিক হীনম্মন্যতায় ভুলত সে। তাই কারো সঙ্গেই স্বাভাবিকভাবে মিশতে পারত না বলে লেখাপড়াও করা হয়নি তার। বেটে চেহেরা নিয়ে বন্ধুরা ঠাট্টা-তামাশা করত, এই লজ্জা সবসময় তাকে ঘিরে রাখত। বন্ধুদের হাসি তামাশায় মাঝে মধ্যে মনে খুব কষ্টও পেত। আজ রোববার রাত ৯টায় আখাউড়া মায়াবী সিনেমাহলের পাশে এশিয়ান টিভির প্রতিনিধি ও আখাউড়া প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি জুটন বনিকের জয়তো মেডিসিন কর্ণার সামনে তার সঙ্গে কথা হয়।


কবির হোসেন বলেছে, এখন বেটে শরীরের লজ্জা আর হীনম্মন্যতা কাটিয়ে উঠেছে সে।  কবির এখন এতটাই ব্যস্ত যে, কে বেটে বা খাটো বল্ল তা চিন্তা করার ফুসরতই নেই। নিজের জীবিকাই এখন তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের হাসি তামাশাকে হাসি দিয়েই মোকাবেলা করে কর্মের মধ্যে জীবন চলছে তার।


কবির জানায়, মায়াবী সিনেমা হলের পূর্ব পাশে সাদিয়া ‘৯৯’ নামে একটি দোকানে ২ হাজার টাকা বেতনে কাজ করছে। সকাল থেকে রাত অবদি কাজ করেই দিন চলে যায় তার। দোকানে অনেক মানুষ আশা যাওয়া করে, মালামাল ক্রয় করার সময় তাকে দেখে কেউ কেউ মুচকে মুচকে হাসে, আবার অনেকে মানুষ নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করে আবার কেউ কেউ তার ভালো মন্দের খবরও নিতে চায়। সব মিলিয়ে দিনটা বেশ ভালোই কাটে কিন্তু সংসারের অভাব অনটন তাকে মাঝে মধ্যে ভাবনায় ফেলে দেয়।

তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বাসুদেব ইউনিয়নের চান্দি গ্রামে। বাবা মারাগেছে, মা আছে। সে সহ দুই ভাই ও দুই বোন মিলিয়ে চার ভাই বোনের মধ্যে কবির হোসেন তৃতীয়। প্রতিদিনের আয়ের উপর নির্ভরশীল অসহায় গরিব পরিবারেই তার জন্ম হয়েছে। কবিরের বড় ভাই গৃহস্থাদির কাজ করে যা আয় হয় তার সাথে কবিরের বেতনের টাকা মিলিয়ে কোন রকমে তাদের অভাবের সংসার চলছে। একটি বোনকে বিয়ে দিয়েছিল কিন্তু বর ভালো না হওয়ায় এই বোনটিও এখন তাদের সাথেই থাকছে।

কবির বলেছে,  ছেলে বেলায় তার বাবা মো: নাসিম মিয়া মারা গেলে তার মা জাহানারা বেগমই এই অভাবের সংসারের হাল ধরেন। তবে পরিবারের অভাব অনটন তাকে বেটে বা খাটো হওয়ার ব্যাপারটায় মাঝে মধ্যে কাদায়। তার শারিরিক গঠন স্বাভাবিক হলে হয়তো সে প্রতিদিন ৩০০/৪০০ টাকা রোজগার করতে পারত। তাতে অভাবের সংসারে অনেক উপকার হত।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এই কবির হোসেন উচ্চতায় ছোট হলেও নিজেকে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর করে রেখেছেন। কর্মের মাধ্যমে সেই জানান দেন যে, উচ্চতায় ছোট হলে কি হবে কর্মে নয়। তবে  খাটো হওয়ার কারণে কর্মের মধ্যেও কিছুটা বিপত্তি ঘটছে তারপরও হেসেখেলেই চলছে তার জীবন। শারিরিব উচ্চতায় খাটো হলেও মনের প্রশস্থতা অনেক বড়।

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!