ব্রেকিং

x

পুষ্টি আর ভেষজ গুণের দেশী ফল ‘ডেউয়া’

সোমবার, ২৮ মে ২০১৮ | ৪:১৪ অপরাহ্ণ

পুষ্টি আর ভেষজ গুণের দেশী ফল ‘ডেউয়া’
ছবি-দুলাল ঘোষ

আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে দেশি ফলই যথেষ্ট। ক্ষেত্রে বিশেষে ক্ষতিকর রাসয়নিক মেশানো বিদেশি ফলের প্রয়োজন নেই। দেশি ফলের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মানুষের জানার ঘাটতি এ ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা। তবে যেটুকু চাহিদা এখনো আছে সেই তুলনায় জোগান কম থাকাও একটি কারণ।


জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কারিগরি সহযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ২০০৮ সালে বছর ধরে দেশের ৭৫টি শস্য ও শাকসবজি, ফলমূলের পুষ্টিমান যাচাই করে। সেখান থেকেই উঠে এসেছে এসব তথ্য-


সেইসব শস্য, শাকসবজি ও ফলমূলের মধ্যে আজ থাকছে দেশীয় ফল ডেউয়ার কথা-

ডেউয়া- গ্রামের মানুষের কাছে একটি পরিচিত ফল। কাঁচা সবুজ ফল স্বাদে টক। পাকলে হলুদ লালের ফলটি টক মিস্টির অন্য স্বাদ। পাকা ফল টকও নয়, আবার মিষ্টিও না।

Dewya 02

প্রথমা প্রকাশনের ‘ছোট্টপিডিয়া’ সিরিজের পঞ্চম বই মৃত্যুঞ্জয় রায়ের ফল  বইটিতে বাংলাদেশে প্রায় ১৩০ রকমের ফলের কথা বলা আছে। বইটিতে ২৮টি ফলের পরিচিতি রয়েছে। সেখানে ডেউয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘ডেউয়া একটি ভেষজ গাছও বটে। এর ছাল গুঁড়ো করে যেকোনো ক্ষতে লাগালে ক্ষত শুকিয়ে যায়।বাংলাদেশ ও আসাম ডেউয়ার জন্মভূমি।’

পুষ্টিবিদদের মতে, ডেউয়া খুবই পুষ্টিমানসমৃদ্ধ ফল। ১০০ গ্রাম ডেউয়াতে ৩৯৮০ মাইক্রোগ্রাম জিঙ্ক, ৫২৫৪ দশমিক ৭৪ মাইক্রোগ্রাম লৌহ এবং ৩৪৮ দশমিক ৩৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম আছে।

ডেউয়া বর্ষার ফল। বৈজ্ঞানিক নাম Artrocurpus lakoocha (Moraceae) Monkey jack গ্রামের হাট-বাজারে বর্ষাকালে ডেউয়া ফল দেখতে পাওয়া যায়।

গ্রামাঞ্চলে এটি অত্যন্ত পরিচিত একটি ফল হলেও শহরাঞ্চলে এটি একটি অপ্রচলিত ফল। দিন দিন দেশে অপ্রচলিত ফলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। কারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে এসব ফলের পুষ্টি ও ভেষজ গুণের কথা। বিদেশেও এসব ফল রফতানি হচ্ছে।

কাঁঠাল ও ডেউয়া একই গুণের অন্তর্ভুক্ত। মার্চ মাসে ডেউয়ার প্রায় পাতাহীন ডালপালায় ফুল আসে আর আগস্ট মাসে ফল পাকে। অপুষ্প ফুলদণ্ড। কারণ ডেউয়ার ফুল দেখতে সাধারণ ফুলের মতো নয়, অনেকটা কাঁঠালের মোচার মতো। আসলে এই ছোট ছোট মোচা অনেক ফুলের সমষ্টি।

এ ফলের বাইরের অংশটি থাকে অসমান। কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকলে হলুদ হয়।

কাঁঠালের মতো ছোট ছোট কোষ থাকে। পাকা ফলের কোষের রং হয় লালচে হলুদ বা লালচে কালো। এই ফল পুরোপুরি গোলাকার হয় না। ফলটির গা উঁচু-নিচু হয়। কাঁচা টক টক স্বাদ।

পাকা ডেউয়া বমি বমি ভাব কাটায় । তৃষ্ণা নিবারণেও কাজ করে। ভিটামিন সি থাকায় ত্বকের খসখসে ভাব দূর হয়। ফলটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সহায়ক। তাপদাহের সময় এই ফল খেলে হিটস্ট্রোকের ঝুকি কমায়।

মেদভুঁড়ি কমাতে চাইলে ডেউয়া ফলের রস এক থেকে দেড় চামচ ঠাণ্ডা পানিতে মিশিয়ে রোজ একবার করে এক মাস খেলে উপকার পাবেন। আর পুরো বছর খেতে চাইলে ডেউয়া কেটে রোদে শুকিয়ে রাখতে পারেন।

বদহজম বা পেটে গ্যাস জমলে পাকা ডেউয়ার রস দেড় চামচ আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে অল্প চিনি দিয়ে প্রতিদিন একবার এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাবেন।

দুই-তিন চামচ ডেউয়ার রস এর সঙ্গে পরিমান মতো লবন ও গোল মরিচের গুঁড়া মিশিয়ে দুপুরে খাওয়ার আগে খেলে মুখে রুচি বাড়বে। এখন রমজান মাস। তাই ইফতারিতেও ডেউয়া ভর্তা সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে পারে। যকৃতের নানা অসুখ নিরাময়ে সাহায্য করে এই ফল। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ত্বক, চুল, নখ, দাঁত ও মাঢ়ির নানা রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে ডেউয়া।

আখাউড়ার আমোদাবাদ, আজমপুর, রাজাপুর, কল্যাণপুর, রামধননগর, হীরাপুর, মনিয়ন্দের বিভিন্ন গ্রামে এই ফলের গাছ রয়েছে। গ্রামের বাজারগুলোতে এখন নিয়মিত উঠছে এই ফল।

ছবি ও লেখা- দুলাল ঘোষ

আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!