ব্রেকিং

x

তিতাসের বুকে ভেসে তারা গুণা!

রবিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ১০:০৮ অপরাহ্ণ

তিতাসের বুকে ভেসে তারা গুণা!

তিতাসের বুকে ভেসে তারা গুণার মজাই আলাদা! সংখ্যায় এক দুই তিন করে হাজার হাজার।সময়ের হিসেবে মিনিট পার হয়ে ঘন্টা। ঘন্টা বলতে কয়েক ঘন্টা সময় যে কখন পেরিয়ে গেলো তা টেরই পায়নি। অবশ্য শেষতক ‍গুণা শেষ হয় নি। ভেসে চলতে চলতে ততক্ষণে আকাশে তারার অস্তিত্ব নেই। আর আকাশে তারা থাকেই বা কি করে? সূর্য্য্য মামা যে জেগে উঠেছে। পূব আকাশে সূর্য্য্য মামার আলোর ঝলকানি। বলা যেতে পারে, এটি একটি গল্প। নয়তো নিছকই পাগলামি। কিন্তু আমি নিশ্চিয়তা দিচ্ছি- এমনটাই হয়েছে। কেননা, গণনাকারি যে আমি নিজেই। হ্যাঁ, আমি নিজেই। সাধে কি আর আকাশের তারা গুণেছি। লঞ্চ আটকে গিয়েছিলে চরে। এরপর উদ্ধারকারি নৌকারও একই হাল। কি আর করা লঞ্চ আর নৌকার ছাদে উঠে তারাই গুণতে হয়েছে।


4
শনিবার যাই নবীনগর। চিরসবুজ সংঘের জলতরঙ্গে আনন্দ ভ্রমণ এ। সকাল সাতটার দিকে আখাউড়ার বনগজ এলাকা থেকে ছাড়ে লঞ্চ। নবীনগরের বাইশমৌজায় খানাপিনা শেষে রওয়ানা হই সন্ধ্যা পৌণে ছয়টায়। পথিমধ্যে নবীনগরের কৃষ্ণনগর এলাকায় অন্তত তিনবার চরে আটকায় লঞ্চ।কয়েকজন চিরসবুজকে পানিতে নেমে একাধিকবার লঞ্চ ধাক্কা দেয়ার মতো কঠিন কাজটি করতে হয়। সফলও হন তারা। মাঝপথে অর্থাৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গোকণ ঘাটে অনেকেই নেমে পড়েন। ১৩৫ এর মধ্যে অন্তত ৫০ জনের মন বললো এ লঞ্চে করেই যাবেন আখাউড়া। রাত তখন ১০টার কাছাকাছি। গন্তব্য থেকে মাত্র তিন-চার কিলোমিটার দূরে। সেই আগের কাহিনী। লঞ্চ আটকালো চরে। আবারো সংঘের সাহসী সদস্যদের পানিতে ঝাঁপ। এবার আর সম্ভব হলো না। রাত প্রায় ১২টা। অনেকটা উপায়হীন আমরা। আলোচনা হলো, পরবর্তী করণীয় নিয়ে। আমাদের সফর সঙ্গী হিরালাল কাকা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নৌকার ব্যবস্থা করলেন। জানা গেল, নৌকা আসার মতো তেল নেই। হিরালাল কাকা তেল দোকানের মালিককে ফোনে কল করে জাগালেন। নৌকা পোঁছতে পৌঁছতে বাজল রাত প্রায় আড়াইটা। নৌকার সঙ্গে ছুটে এলেন ফেরদৌস ভাই। আমাদের সঙ্গে থাকা আনন্দ ভ্রমণের কিছু মালামাল লঞ্চ থেকে নামিয়ে নৌকা ছাড়তে ছাড়তে রাত তিনটার বেশি বাজল। অতীত অভিজ্ঞতার কথা বিবেচনা করে এবার গুগল ম্যাপ চালু করে ছুটে চলা। এরই মধ্যে একজনের ভুল নির্দেশনার
নৌকা আটকালো চরে। আবারও পানিতে নেমে হেইয়ু হেইয়ু শব্দ তুলে ধাক্কা। মিনিট ২০ বিশেকের চেষ্টা শেষে আবার ছুটে চলা। একটা সময়ে হঠাৎ করেই কারো মোবাইল ফোনেও গুগল ম্যাপ কাজ করছে না কিংবা সঠিক নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। যা হবার তাই হলো। আবার চরে উঠল নৌকা। এবার অবশ্য পানিতে নেমে ধাক্কাতে হলো না। মাঝিদের চেষ্টায় নৌকা নামলা চর থেকে। এবার নদীতে থাকা জেলেরা নির্দেশনা দিলেন কিভাবে যেতে হবে। সেই মতে, ছুটে চলা। এবার অবশ্য নির্বিঘ্নে এলাম বড় বাজার নৌকা ঘাটে। তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। আমাদের জন্য রাত আটটা থেকে ব্যাটারিচালিত অটো নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন ১২ চালক। ঘাটে আমাদেরকে পৌঁছতে দেখে তারাও যেন তৃপ্তির ঢেঁকুর গিললেন। ঘুমহীন রাত কাটালেও তাদের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ না দেখে অবাক হই। পরিশেষে তারা গুণার কথা দিয়েই শেষ করছি। মোবাইল ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যায়। পাওয়ার ব্যাঙ্কটাও কাজ করছিল না। হাওলাদ করা মোবাইল ফোনে বাড়িতে জানাই যে, ফিরতে দেরি হবে। এদিকে  ফরসঙ্গীদের সঙ্গে কথা বলার আর কোনো সাবজেক্ট পাওয়া যাচ্ছিল না! চোখে নেই ঘুম। সব মিলিয়ে তারা গুণা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি যে, চরে কাধিকবার আটকে যাওয়ার পরও দুই একজন বাদে কারো মনেই কোনো ভয়ের ছাপ ছিল না। কেউ কেউ একটু আধটু ঘুমিয়ে সময়টা পার করেছেন। এত ঝঞ্জালের পর ইউএনও মহোদয়কে সাবলীল দেখেছি। একবার লঞ্চের কেবিনে বসে পাওয়ার ব্যাঙ্কে ফোন চার্জ দেয়ার চেষ্টারত অবস্থায় ইউএনও ভাবি (অ্যাডভোকেট উম্মে শবনম মোস্তারি মৌসুমী) বললেন, দাদা এখনো ঘুমান নি। ওনার সাবলীল কথায় একটু অবাকই হয়েছি। কেননা, জেনেছিলাম নদী পথটাকে নাকি ওনি খুবই ভয় পান। আনন্দ ভ্রমণ নিয়ে লেখার জন্য যারা উৎসাহ দিয়েছেন তাদেরকে উৎসর্গ করলাম লেখাটি।


আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!