কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবীন্দ্র চাকমা রবিবার পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কমলাসাগর-তারাপুর সীমান্ত হাটে। উদ্দেশ্য, ভারতীয় পণ্য কেনাকাটা ও হাটটি ঘুরে দেখা। তবে কাল তাঁদেরকে কিনতে হয়েছে শুধু বাংলাদেশি পণ্য। যেটুকু সময় হাটে ছিলেন ছবি তুলে ও এদিক ওদিক ঘুরে সময় কাটিয়েছেন।
শুধু ওই কর্মকর্তাই নয়, বাংলাদেশের সব ক্রেতাই কাল বিফল মনোরথে ফিরে গেছেন। ভারতীয় বিক্রেতারা হাটে না আসায় সকল বাংলাদেশি ক্রেতাকেই মনে ক্ষোভ নিয়ে ফেরত আসতে হয়েছে। কয়েকশ’ বাংলাদেশি কাল জড়ো হয়েছিলেন হাটে।
ভারতীয় ব্যবসায়িদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেখানকার একটি প্রভাবশালী মহলের চাপের তাঁরা দোকান সাজিয়ে বসতে পারেন নি। এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
এদিকে বাংলাদেশের ব্যবসায়িরাও জানিয়েছেন বেশ কয়েকমাস ধরেই হাটে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ভারতীয়দের কড়াকড়ির মুখে সেখানকার ক্রেতা খুব একটা আসতে পারেন না বলে বিক্রি নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় তারা আবারো পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৬ জুন কমলাসাগর-তারাপুর সীমান্ত হাটের শুভ উদ্বোধন হয়। এ হাটে দুই দেশের ২৫ জন করে মোট ৫০ জন ব্যবসায়ির পণ্য বিক্রির অনুমতি রয়েছে। সীমান্ত হাটের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে অবস্থানকারিরা নির্ধারিত কার্ড সংগ্রহ করে এ হাট থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। দুই দেশের ভূমি মিলিয়ে এক একর ৫০ শতক জায়গার উপর হাটটি প্রতিষ্ঠিত। প্রতি রবিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত এখানে সাপ্তাহিক হাট বসে। যেখানে গার্মেন্টস সামগ্রী, কসমেটিকস, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ইত্যাদি পাওয়া যায়। পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের দুই দেশের মাত্র দুই শতাধিক ব্যক্তি হাটের আসার জন্য নিয়মিত কার্ড সংগ্রহ করেছেন। এছাড়া আগে দুই দেশ থেকেই প্রায় এক হাজার করে অতিথি কার্ড দেয়া হতো।
সরেজমিনে গিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়িদের সঙ্গে কথা বলে হাটের অচলাবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। মূলত অতিথি কার্ড বন্ধ করে দেয়ার পর থেকেই এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অতিথি কার্ড ভারতীয়রা বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের ব্যবসায়িরা ধর্মঘটও ডেকেছিলেন। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে ব্যবসায়িরা পণ্য নিয়ে আবার হাটে বসতে শুরু করেন।
সীমান্ত হাটের বাংলাদেশি ব্যবসায়ি পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মো. সালাউদ্দিন শাহীন বলেন, ‘আগে দুই দেশ থেকেই এক হাজার করে অতিথি কার্ড দেয়া হতো। পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের বাইরের লোকজন ওই কার্ড সংগ্রহ করে হাটে আসতে পারতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতীয়রা ওই কার্ড দেয়া বন্ধ করে দেয়। এতে ভারতীয় ক্রেতা ক্রমে গেলে বাংলাদেশি ব্যবসায়িরা লোকসানের মুখে পড়ে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ব্যবসায়িদের অনুরোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের অতিথি কার্ডও বন্ধ করে দয়। রবিবার কোনো ধরণের ঘোষণা ছাড়াই ভারতীয় ব্যবসায়িরা আসেনি।’
বাংলাদেশের ব্যবসায়ি অলিউল্লাহ সরকার অতুল বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে বসে ১২টা নাগাদ বসে মাত্র ৭০ টাকার পণ্য বিক্রি করতে পেরেছি। তাও আবার এর ক্রেতা ছিলেন বাংলাদেশি। আজ (গতকাল) ভারতীয় বিক্রেতারা না আসায় বাংলাদেশিরা ঘুরাঘুরি করে চলে গেছেন।’
আরেক বিক্রেতা মো. মালু মিয়া বলেন, ‘ভারতীয় ক্রেতা খুব কম আসে বলে আমরা খুবই ক্ষতিগ্রস্থ। দোকানের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে বলে বাধ্য হয়ে আসতে হচ্ছে। তবে এভাবে আর বেশিদিন আসা সম্ভবপর হয়ে উঠবে না।’
ভারতের ব্যবসায়ি মিটন সরকার ও ভরত দেববর্মাকে দেখা যায় বাংলাদেশের একটি দোকানে বসে থাকতে। কথা হলে এ প্রতিবেদককে তাঁরা জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল হাটে আসতে বাধা দিয়েছে। যে কারণে রোববার তাঁরা পণ্য নিয়ে আসতে পারেন নি। কেউ আসলেও চাপের মুখে চলে যান। সেখানকার একটি পক্ষ ওই হাটে নতুন করে দোকান বরাদ্দ নিতে চান বলে তাঁরা জানান।
হাটে আসা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মো. পারভেজ, চট্টগ্রাম পাঠানতলীর মলি আক্তার, কুমিল্লা কোটবাড়ির কাউছার সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অতিথি কার্ড দেয়া বন্ধের বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।’
কসবা পৌর এলাকার শাহপুরের মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘সীমান্তের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের হওয়ায় আমার একটি পাস রয়েছে। কিন্তু রোববার এসে ভারতীয় কোনো ব্যবসায়িকে না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সীমান্ত হাট পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি হাসিনা ইসলাম বলেন, ‘ভারতীয় কোনো ব্যবসায়ি হাটে না আসার বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’
আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।
Development by: webnewsdesign.com