ব্রেকিং

x

আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট চরমে

আখাউড়া হাসপাতালে ডাক্তারের বদলে রোগী দেখেন ফার্মেসি পরিচালক!

বুধবার, ২৮ মার্চ ২০১৮ | ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

আখাউড়া হাসপাতালে ডাক্তারের বদলে রোগী দেখেন ফার্মেসি পরিচালক!

‘ইমার্জেন্সির মইদ্যে ত সব সম ডাক্তার বুয়া থাহে। এর লাইগ্যা অই আগে এইখানঅ যাই। আজকা (গতকাল) আইয়া চিনা লোকটারে পইয়া জিগাইছি ডাক্তার কই। চেয়ারে বইয়া থাহইনা ওই লোকে কইছে আমি অই ডাক্তার। এর লাইগ্যা আমি তাইনরে আমার বাচ্চাডারে দেহাইছি। তাইন যে ডাক্তার না আমি ত জানি না।’
কোলের সন্তান রিদিতাকে গতকাল মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া চিকিৎসা করাতে এসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রীনা আক্তার। উপজেলার গঙ্গাসাগর গ্রামে ওনার বাড়ি। জরুরি বিভাগে ব্যবস্থাপত্র প্রেসক্রিপশন) করে দেয়া ব্যক্তি চিকিৎসক নন জানার পর মেডিকেল অফিসার শাহনেওয়াজ হাসান সজিবের কাছে ছুটে যান ওই নারী।
জানা গেল, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বসে থাকা ব্যক্তিটির নাম রনি আচার্য্য। উপজেলার গঙ্গাসাগরের শংকর আচার্যের ছেলে। বাবার সঙ্গে তিনি ফার্মেসি ব্যবসা দেখাশুনা করেন। কথা হলে, নিজেকে প্রথমে এ হাসপাতালের সাকমো (চিকিৎসা সহকারি) হিসেবে পরিচয় দেন ওই যুবক। কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে স্বীকার করেন তিনি এখানকার কেউ নন।
ওই যুবকের পাশাপাশি গতকাল মঙ্গলবার ওই হাসপাতালে রোগী দেখেছেন একজন ডেন্টাল টেকনোলজিস্ট ও সেবিকা। ছিলেন মাত্র একজন মেডিকেল অফিসার। সকাল নয়টা থেকে বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত তাঁরা প্রায় দুইশ রোগী দেখেছেন। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করতে দেখা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে এ হাসপাতাল থেকে বেশ কয়েকজন চিকিৎসক ও চিকিৎসা সহকারিকে বদলি করা হলেও নতুন কাউকে দেয়া হয় নি। গতকাল মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. শফিউর রহমান অফিসিয়াল কাজে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যান। মেডিকেল অফিসার রুহুন মোহসেন সুজন ‘ছুটিতে’ আছেন বলে জানানো হয়। ওই দুইজন চিকিৎসকই কাগজে কলমে কর্মরত আছেন। একমাত্র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. শাহনেওয়াজ গতকাল মঙ্গলবার আসেন নি।
সরেজমিনে গেলে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও রোগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের অভিযোগের কথা শুনা যায়। বহির্বিভাগের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অনেকে অভিযোগ করেন তাঁদেরকে চাহিদা অনুযায়ি ওষুধ দেয়া হচ্ছে না। ওষুধ বিতরণ ও টিকিট দেয়া কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগুনা কিছু ওষুধ সেখানে রাখা হয়েছে। টিকিট দেয়া ও রোগীদের নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য বিভিন্ন ওষুধ কম্পানির দেয়া কাগজ ব্যবহার করতে দেখা যায়। অথচ এসবের জন্য আলাদা বরাদ্দ রয়েছে, যা ঠিকাদারের মাধ্যমে সরবরাহ করার কথা।
উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের গ্রাম পুলিশ জাহানারা বেগম জানান, চিকিৎসক একাধিক ওষুধ লিখে দিলেও ওনাকে শুধুমাত্র ছয়টি প্যারাসিটামল ট্যাবলেট দেয়া হয়। পরে আবার গিয়ে চাইলে গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেটের বদলে ছয়টি এন্টাসিড দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারি বলেন, ‘আমাদের এখানকার অবস্থা খুবই নাজুক। জরুরি বিভাগের জন্য মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট নেই একজনও। ইউএইচএফপিও ছাড়া মাত্র দুইজন চিকিৎসক আছেন। তারাও এখন প্রতিনিয়ত বসতে পারেন না। কেননা, কয়েকদিন ধরে তাঁরা টানা কয়েকদিন ধরে ডিউটি করতে হচ্ছে। যে কারণে সমঝোতার মাধ্যমে তাঁরা একেক সময় একেকজন আসেন।’
ডা. শাহনেওয়াজ হাসান সজিব এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘একা কুলিয়ে উঠা সম্ভব নয় বলে জরুরি বিভাগে একজনকে রাখা হয়েছে সহযোগিতা করার জন্য। কিন্তু তিনি প্রেসক্রিপশন করার কথা না।’ চিকিৎসক সংকটের কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. শফিউর রহমান জানান, হাসপাতালে মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট সংকট থাকায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন একাধিক কর্তৃপক্ষকে চিঠি ও মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।


 


আখাউড়ানিউজ.কমে প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, ভিডিও চিত্র, কপিরাইট আইন অনুযায়ী পূর্বানুমতি ছাড়া কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।

Development by: webnewsdesign.com

error: Content is protected !!